শেখ হাসিনা তার স্বার্থের জন্য সংবিধানকে যাচ্ছ তাই ভাবে সাজিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ যেমনটা জরুরী ঠিক তেমনি জরুরী আমাদের সংবিধানের যেসব জায়গায় স্বৈরাচার হাসিনা ছিদ্রি করে দিয়েছে সেগুলো ঠিক করা।
সেনা বাহিনির হাত থেকে তো বলতে গেলে ক্ষমতা সব নিয়েই নাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমি মনে করি পলিটিকাল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে এই ধরনের ডিফেন্সে আলাউ না করাই ভালো।
শুধুমাত্র সংবিধান নয়, হাসিনা প্রতিটা যায়গায় তার মন মতো রুলস বানিয়েছে। আপনি কি জানেন পুলিশের এই কর্মবিরতি কেনো? তাদের যে ১১ দফা দাবি, সেগুলো আসলে কি? পুলিশের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা বলছেন যে পুলিশে আসলে চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই নেই। পুলিশ সরাসরি ভাবে সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনে। এজন্য দেখা যায় পলিশের বড় বড় অফিসাররা মন্ত্রীদের মন যুগিয়ে চলেন। কারন, তাদের মনের মতো না হলেই বদলি, বরখাস্ত, এমন কি ডিমোশন দিয়ে দেয় সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে। একটা লেখা ফেইসবুকে খুব ঘুরপাক খাচ্ছে, লেখাটা এখানে দিলাম পড়ে দেখতে পারেন।
কিছু তিতা কথা!!!
বিসিএস পুলিশ সার্ভিস দেশের আরো দশটা সার্ভিসের/চাকরির মত একটা চাকরি। কিন্তু এখন আমরা জাতির শত্রু। মানুষ ইজ্জত তো দুরের কথা পারলে মারতে আসে। খেয়াল করলে দেখা যাবে , নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা/ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন , বিএনপি বা অন্য দলের কোন আন্দোলন ঘুরে ফিরে একসময় গিয়ে পুলিশ বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। যেন পুলিশই সব কিছুর নীতি নির্ধারক, পুলিশ সব পারে!! পুলিশ যদি এতই পারতো, তাহলে একটা রেগুলার প্রমোশনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সারাদিন ঘুরতে হত না, ন্যায্য পাওনাটাকেও ফেভার বলে মনে হত না।
চাকরি করতে এসে দেখলাম, আমাদের প্রাইজ পোস্টিং গুলো আইজিপি, কমিশনার বা ডিআইজি স্যাররা খুব একটা দিতে পারেন না। কেন জানেন??
আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটা বাহিনী। এখানে মূল নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর হাতে। আইজিপি আমাকে পছন্দ না করলেও সমস্যা নেই যদি আমি মন্ত্রির আনুকূল্য পাই।
মাঠ পর্যায়ে ওসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। কাগজে কলমে জেলার এসপি এই পদায়ন করে থাকেন। নন ক্যাডার পুলিশ অফিসারদের একটা কাঙ্ক্ষিত পোস্ট ওসি। সবাই জীবনে একবার হলেও হতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হল, বেশির ভাগ জায়গায় ওসি পদায়ন হয় স্থানীয় এমপির ডিও লেটারের মাধ্যমে। যদি জেলার এসপি সেটা না মানেন, এমপি অভিযোগ করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে যে এসপি তাদের দলের জন্য বিপদজনক! তারপরে এসপি উইল ফিল দা মিউজিক। অনেক থানায় দেখবেন, ওসি কাউকেই মানে না, সার্কেল এএসপি তো দুধ ভাত!!
এতগুলো কথা বলার কারণ হল, থানার সেবাই পুলিশের দর্পণ। থানা যেমন , পুলিশের ইমেজও তেমন। থানায় খারাপ সেবা দিয়ে যদি উপরে পীর আউলিয়ার পদায়ন করা হয়, কোন লাভ নাই। আর ঐ যে বললাম ওসির কথা, যে ওসি এমপির কারণে ওসি হয়েছে, সে কি তার বিরুদ্ধে যাবে? আর ওসির কথা শুনতে নিচের অফিসাররা বাধ্য। না বলার সু্যোগ নেই। সেনাবাহিনী / বিজিবি/ আনসার/ পুলিশ সব বাহিনীতেই চেইন অব কমান্ড মানতে হয়।
এবার আসি জেলার এসপি এর কথায়। প্রশাসন ক্যাডারে ডিসি পদায়নের পূর্বে ফিটলিস্ট করা হয়, যেন ভাল অফিসারদের পাঠানো যায় জেলায় , সচিবগণ তাদের ভাইভা নেন। আর পুলিশে এসবের দরকার নাই। রাজনৈতিক আনুগত্য থাকাটাই আপনার বড় গুণ। নেতা যদি আপনাকে জেলার এসপি বানায়, আপনি তার জন্য সব করবেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য , পুলিশের মহাপ্রভাবশালী আইজিপি বেনজীর আহমেদও নিজের সিদ্ধান্তে খুব একটা বেশি জেলার এসপি পদায়ন করতে পারেন নাই।
এসপি বা ওসির চিত্র যদি এই হয়, আপনি নিরপেক্ষ পুলিশ পাবেন কই? একদম উপরে তো নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে এক্সটেনশন নামক জাদুর কাঠি দিয়ে!! তার চেয়ে এই পদে যোগ্য কাউকে পাওয়া যায়নি বলে এই পদে তাকে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হল!! অথচ, আরো ৩২ জন ছিলেন অতিরিক্ত আইজিপি!!
কেবল বিগত ১৫ বছর না, পুলিশকে সবাই আরো আগে থেকেই রাজনৈতিক ভাবে অপব্যবহার করেছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনেও করবে। নিজেরা পিছনে থেকে পুলিশকে জনতার মুখোমুখি করবে।
তাই নিরপেক্ষ পুলিশই এই সমস্যা থেকে উত্তরনের উপায়। গতকিছুদিনের ঘটনায়, যাদের সাথে আমার সম্পর্ক অনেক ভাল ছিল, তাদের সাথেও যেন যোগাযোগের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে।
কারণ, পুলিশ এখন জাতীয় ভিলেন। পুলিশ মনের আনন্দে জীবন কেড়ে নেয় না, আমাদের সেই ট্রেনিং না। কিন্ত অতি উৎসাহী এবং রাজনৈতিক ভাবে বায়াসড পুলিশও রয়েছে। এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ ছিল রংপুরে আবু সাইদ এর মৃত্যু , কোন ভাবেই এটা জাস্টিফাই করা সম্ভব না, যদি আইনের ভাষায় বলি, সে কোন থ্রেট ছিল না, একটা মানুষকে এত কাছে থেকে গুলি করতে পুলিশ ৫০ বার ভাববে, যদি না সে অসুস্থ বা পলিটিক্যালি বায়াসড না থাকে।
দেশ সংস্কার হচ্ছে, আমাদের পুলিশেও সংস্কার অনেক আগে থেকেই প্রয়োজন। পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কোন বিকল্প দেখিনা। ২০০৭ সালে এর খসড়া হলেও সুবিধাবাদী অংশ এবং আরো কিছু রাষ্ট্রীয় বডির কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি।
স্বাধীন নিরপেক্ষ পুলিশ বাহিনী গঠন করতে রাষ্ট্রকর্তাদের এত ভয় কেন? তার মানে প্রত্যেক দলই কি পুলিশকে ব্যবহার করে সুবিধা নিতে চায়?? আমরা আর ব্যবহৃত হতে চাই না। আর চাই না জনগণের মুখোমুখি অবস্থান নিতে। এখনই সময়। আমরা সরকারের পুলিশ হব না, আমরা হব রাষ্ট্রের পুলিশ।
Source: facebook post.