ক্রিপ্টোজগতের সাধারণ বিষয় ১০১ | পর্ব-০১
বিটকয়েনটক ফোরামের সকল বাংলাদেশি নতুন মেম্বারদের উদ্দেশ্য একটি ভালো উপায় দিলাম, এটি ব্যবহার করলে আশা করি আপনাদেরকে আর এইখানে একই প্রশ্ন বারবার জিজ্ঞেস করতে হবে না। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে এইটা বুঝতে পারছি যে, বাংলাদেশি অধিকাংশ বিটকয়েনটক ফোরামের নতুন ব্যবহারকারীরা এয়ারড্রপ না হয় বাউন্টির কাজ করার মাধ্যমে এই ফোরাম সম্পর্কে জানতে পেরেছে। কারণ অধিকাংশ নতুন ব্যবহারকারীরা এইখানে এসেই বাউন্টি কিংবা কিভাবে ফ্রী অর্থ উপার্জন করা যায়, সেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চায়। কেউ কখনোই বিটকয়েন ও ব্লকচেইন সম্পর্কে জানতে চায় না এবং এমনও বিষয় লক্ষ্য করছি যে, অনেকে বিভিন্ন ব্লকচেইন সম্পর্কে জানে না।
সবাই এমন একটি ভুল ধারণার মধ্যে আছে যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে বিটকয়েন , আর ওয়ালেট মানেই শুধু কয়েনবেজ বা ট্রাস্ট ওয়ালেই , এক্সচেঞ্জ মানেই বাইন্যান্স বা কিউকয়েন আর বিটকয়েনটক ফোরাম না এটি ফ্রী ইনকামের আড্ডাখানা।
যারা এমন ধারণার মধ্যে আছেন , তাদের জন্য এই পোষ্টটি এবং তারা অন্যদের বেশি সহযোগিতা ছাড়া কেমন করে বিটকয়েন ও ব্লকচেইন সম্পর্কে ব্যাপক জানতে পারবেন , সেটির একটি নিন্জা টেকনিক বলব প্রশ্ন-উত্তর পদ্ধতিতে:প্রশ্ন-০১: বিটকয়েনটক ফোরামটি কি এবং কাদের জন্য ?
------------------------------------------------
উত্তর: বিটকয়েনটক ফোরামটি ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কৌতুহলী ব্যক্তি ও প্রেমিদের জন্য এবং এখানের নতুন ব্যবহারকারীরা বিটকয়েন ছাড়া অন্যান্য সকল ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইনের নিত্যনতুন বিষয় জানতে পারবে ও উচ্চপদের সকল ব্যবহারকারীরা নতুনদেরকে সহযোগিতা করে থাকে ।
প্রশ্ন-০২: মেরিট কী এবং এটির গুরুত্ব কি?
------------------------------------------------
উত্তর: বিটকয়েনটক একটি সম্পূর্ণ মুক্ত ফোরাম এবং এখানে যেকেউ একাউন্ট তৈরি করতে পারবে। তাই কিছু সমস্যার সৃষ্টির হয় এবং সেটি হলো স্প্যামাদের/স্ক্যামাদের সংখ্যা ও অপব্যবহাকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি । আর এর সমাধান হিসেবে এডমিনিস্টররা মেরিট পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। এতে আপনি কতটা এই ফোরামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারকারী সেটি বুঝা যায়। এছাড়াও যারা উচ্চপদের ব্যবহারকারী তারা খুবই অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য হয়ে থাকেন। তাই যেকোনো লেনদেনে সহযোগিতার পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে সহযোগিতা করে থাকেন।
প্রশ্ন-০৩: ক্রিপ্টোকারেন্সি মানেই কি বিটকয়েন?
------------------------------------------------
উত্তর: ক্রিপ্টোকারেন্সি মানেই বিটকয়েন না । তবে ব্লকচেইনের সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন হচ্ছে বিটকয়েন এবং বিটকয়েন ছাড়াও আরো অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে , যারা বিটকয়েন ব্লকচেইনের সীমাবদ্ধতা ছিল বা যেসবের সমাধান বিটকয়েন দিতে পারেনি. সেসব সীমাবদ্ধতা বা সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে পরবর্তীতে উদ্ভাবন হয়েছে।
প্রশ্ন-০৪: ক্রিপ্টো ওয়ালেট মানেই কি কয়েনবেজ বা ট্রাস্ট ওয়ালেট?
------------------------------------------------
উত্তর: না, কিন্তু কয়েনবেজ বা ট্রাস্ট ওয়ালেট যেকোনো নতুন ব্যবহারকারীর জন্য খুবই সহজ এবং জনপ্রিয়। এছাড়াও কয়েনবেজে ই-মেলে কোনো ফি ছাড়া লেনদেন করা যায় ( এটি অবশ্য আপহোল্ড ওয়ালেটেও আছে ) । ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের জন্য সিস্টেম অনুযায়ী বিভিন্ন ওয়ালেট আছে। যেমন:
Ledger Nano X, Trezor Hardware Wallet, Exodus , Guarda , Coinomi Mobile Wallet, Atomic Wallet, Jaxx Wallet প্রভৃতি একইসাথে একের অধিক ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনে ও সংরক্ষণের জন্য কিছু জনপ্রিয় ওয়ালেট । এছাড়াও নিজস্ব ব্লকচেইনের জন্য প্রত্যেকটি ক্রিপ্টোকারেন্সির অফিসিয়াল ওয়ালেট রয়েছে।
প্রশ্ন-০৫: ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ মানেই কি বাইন্যান্স কিংবা কিউকয়েন?
------------------------------------------------
উত্তর: না , ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ মূলত দুই প্রকারের হয়। যেমন:
সেন্ট্রালাইজ এক্সচেঞ্জ: যেসব এক্সচেঞ্জের সকল কার্যক্রম কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা কিছু ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয় এবং ব্লকচেইনের সম্পূর্ণ দরকার হয় না। শুধুমাত্র এক্সচেঞ্জের সকল ক্রিপ্টো সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রত্যেকটি ব্লকচেইনের নিজস্ব কিছু কন্ট্রাক এড্রেস ব্যবহার করে থাকে।
ডিসেন্ট্রালাইজ এক্সচেঞ্জ: এইসব এক্সচেঞ্জ মূলত যেকোনো একটি ব্লকচেইনকে ব্যবহার করে এক্সচেঞ্জের সকল কার্যক্রম করে থাকে। সহজ ভাষায় বলা যায় যে, এক্সচেঞ্জের সকল বাই-সেল ব্লকচেইনের কনফার্মেশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে এবং কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের অধীনে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর এইসব এক্সচেঞ্জ সুরক্ষিত বেশি, কারণ ওয়ালেটের প্রাইভেট কি বা ওয়ালেটের প্রবেশাধিকার চাবি নিজের কাছে থাকে। তাই ক্রিপ্টো হারানোর সম্ভাবনা খুবই কম থাকে, যদি অন্য কেউ আপনার ওয়ালেটের প্রাইভেট কি না পায়।
প্রশ্ন-০৬: এয়ারড্রপ কিংবা বাউন্টি বিষয়টি কী এবং এখানে কাজটি করবোই বা কেন?
------------------------------------------------
উত্তর: নতুন সকল ব্লকচেইন প্রজেক্ট তাদের প্রচারের জন্য কিছু ক্যাম্পেইন করে থাকে, যেখানে প্রজেক্টটি সকল প্রচারকারীকে তাদের নিজস্ব ক্রিপ্টো টোকেন বা কয়েন পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়ে থাকে। এয়ারড্রপে সাধারণত প্রজেক্টের সোশাল মিডিয়াগুলো ফলো/লাইক করতে হয় এবং বাউন্টির কাজগুলো বেশি সময় নিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। বাউন্টিতে সাপ্তাহিক নির্দিষ্ট সংখ্যক সোশাল মিডিয়ার পোষ্টগুলো লাইক ও শেয়ার করতে হয়। এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, (১)এতে প্রজেক্টের কি লাভ এবং (২) আমরা কেনই বা এই কাজটি করব। তার উত্তর হলো (১) প্রজেক্টটির যেহেতু অর্থের দরকার উন্নয়ন কাজের জন্য ও এই জন্য যদি তারা একজন ফ্রিল্যান্সারকে এসইও (SEO ) কিংবা সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM) কাজের জন্য মনোনয়ন করে । তাহলে তারা হয়ত যথেষ্ট অর্থ উত্তোলন করতে পারবে না, কারণ ইনভেস্টররা/বিনিয়োগকারীরা প্রজেক্টের সোশাল মিডিয়া অবশ্যই দেখবে এবং যাচাই করবে যে, প্রজেক্টের কতগুলো সাপোর্টার আছে ও কতটা জনপ্রিয়। তাই প্রজেক্টগুলো তাদের প্রজেক্ট সম্পর্কে বিটকয়েনটক ফোরামে তাদের একটি ANN পোষ্ট তৈরি করে এবং এয়ারড্রপ ও বাউন্টি চালু করে। এতে একদিকে প্রজেক্টি কম খরচে যেমন তাদের প্রচার করে নিচ্ছে, তেমনি প্রচারকারীরা তাদের কাজের জন্য প্রজেক্টির ক্রিপ্টো টোকেন পাবে, যেটি পরবর্তীতে এক্সচেঞ্জে লিস্ট হলে প্রচারকারীরা তাদের কাজের পারিশ্রমিক সম্পূর্ণরূপে নিজেদের হাতে পেয়ে যাবে। এইভাবে প্রজেক্ট তাদের প্রচার করে এবং প্রচারকারীরা/বাউন্টিতে কাজ করা ব্যবহারকারীরা তাদের কাজের মাধ্যমে ফ্রিতে ক্রিপ্টোকারেন্সি ইনকাম করতে পারে।
প্রশ্ন-০৭: আমি অনেক ইংরেজি লেখা বুঝতে পারি না , এটির সমাধান কি আছে?
------------------------------------------------
উত্তর: এটি প্রায় সকল নতুন ব্যবহারকারীদের সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা হয়ে থাকে। যদি কেউ এই সমস্যায় থাকে , তাহলে তাদেরকে আমার অভিজ্ঞতা থেকে এটি বলব যে, আপনারা গুগল ট্রান্সলেটর ( Google Translator ) ব্যবহার শুরু করুন। যখনই কোনো ইংরেজি বুঝতে পারবেন না, তখনই গুগল ট্রান্সলেটরে “ইংরেজি থেকে বাংলাতে” রূপান্তর করেন । এতে কিছুটা বুঝতে পারবেন যে, ইংরেজি লেখাটিতে কি বলছে। আর এইভাবে যতদিন যাবে ততই আপনার ইংরেজি বুঝতে পারবেন এবং ইংরেজি খুবই সহজ মনে হবে । ফলস্বরূপ এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করতে পারবেন।
আজকে এইটুকুই , আপনাদের অন্যান্য কোনো সমস্যা থাকলে প্রশ্ন করুন । আমি পরবর্তীতে এইরকম “প্রশ্ন-উত্তর” পোষ্টের মাধ্যমে সকল প্রশ্নের উত্তর দিব।