আমরা অনেকেই জানি না বিটকয়েন ফুল নোড কি। আমার জানামতে, আমাদের এই লোকাল থ্রেডে কেউ কখনো এইসব নিয়ে খুব আলোচনা করেও নাই। যাই হোক, আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব ফুল নোড কি, ফুল নোড আমাদের কি কাজে লাগবে এবং কিভাবে একটা ফুল নোড চালু করা যায়।
ফুল নোড কি?আমরা বেশিরভাগ সময়েই বিটকয়েনে লেনদেন করার জন্য ইলেকট্রাম ব্যবহার করে থাকি । অনেকেই কয়েনবেজ ওয়ালেট কিংবা ব্লকচেইন ওয়ালেট ব্যবহার করে থাকেন। কয়েনবেজ একটি সেন্ট্রালাইজড ওয়ালেট যেখানে আপনি আপনার বিটকয়েনের সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রন তাদের নিকট দিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে, ইলেকট্রাম ওয়ালেটে আপনি নিজেই সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। তবে, ইলেকট্রাম ওয়ালেট হল একটা লাইট ওয়ালেট যা অন্য ফুল নোডের উপর সম্পুর্ন নির্ভরশীল হয়ে থাকে।
একটু ব্যাকগ্রাউন্ড আলোচনা করি। বিটকয়েন ব্লকচেইনে কি থাকে? বিটকয়েন এর যত ট্রাঞ্জেকশন এই পর্যন্ত হয়েছে সবগুলোর রেকর্ড বিটকয়েন ব্লকচেইনে রয়েছে। সেই জেনেসিস ব্লক বা প্রথম ব্লক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত ট্রাঞ্জেকশন হয়েছে সবগুলো এক একটি ব্লকের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা আছে। যে কেউ চাইলেই সব এক্সপ্লোরারে চেক করতে পারেন। এখন আপনি যখন কাউকেন বিটকয়েন পাঠাতে যাবেন, তখন আসলে ব্যাকগ্রাউন্ডে কি হয়? আমরা তো শুধু বিটকয়েন এর পরিমান দিচ্ছি, তারপর কোন এড্রেসে পাঠাবো সেটা দিয়ে সেন্ড বাটনে ক্লিক করছি। কিন্তু ট্রাঞ্জেকশনগুলো আসলে কিভাবে সম্পন্ন হয়?
মনে করেন, কেউ ইলেকট্রামে তার বিটকয়েন এর পরিমাণ কোনভাবে পরিবর্তন করলো। এইগুলো সবই তো প্রোগ্রাম। আপনি চাইলে আপনার মত করে একটা অনেক কিছু ইডিট করতে পারবেন। যেমনটা আমরা চাইলেই একটা ওয়েবসাইটে গিয়ে ইন্সপেক্ট ইলিমেন্টে ওভাররাইট করতে পারি। যাই হোক, মনে করুন, আপনার ইলেকট্রাম ওয়ালেটে ১ বিটিসি আছে। কিন্তু আপনি আপনার পিসিতে থাকা ওয়ালেটের কোড ইডিট করে সেটা কোনরকমে ২ বিটিসি করলেন এবং সেটা আপনি কাউকে পাঠাতে চান। এইখানেই মুল ব্যাপার। আপনি যদি কোনরকমে সেন্ড করতেও সক্ষম হন, কোন লাভ হবে না। আপনার ইলেকট্রাম ওয়ালেট যে ফুল নোডের সাথে কানেক্টেড আছে, সেগুলোতে চেক করে দেখবে আসলে আপনার ব্যালেন্স ২ বিটিসি আছে কিনা। না থাকলে আপনার ট্রাঞ্জেকশন ফলস হবে বা রিজেক্টেড হবে।
এখন কি ফুল নোডের কাজ কিছুটা বুঝতে পেরেছেন? ফুল নোড সব ট্রাঞ্জেকশন এর ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখে যার কারনে উক্ত নোড বুঝতে পারে যে কোন এড্রেসে কত বিটিসি আছে। তাই বলা যায়, ফুল নোডের কাজ হল একটা ট্রাঞ্জেকশনের সত্যতা যাচাই করা, সেগুলো মেইন নেটওয়ার্কে ট্রান্সফার করা কিংবা অন্যান্য ফুল নোডের সাথে কানেক্টেড হয়ে তথ্য বা ট্রাঞ্জেকশন এর তথ্য হালনাগাদ করা।
এই ছাড়াও আপনি যদি অন্য কোন ফুল নোডের উপর নির্ভরশীল হন, তাহলে আপনি যে ফুল নোডের উপর নির্ভরশীল সে নোড আপনার অনেক তথ্য দেখতে পারবে বা মনিটর করতে পারবে।
আবার ফুল নোড ব্যবহার করা মানে আপনি বিটকয়েন নেটওয়ার্ক কে সঠিক থাকতে সহায়তা করছেন। যত বেশি ফুল নোড থাকবে, বিটকয়েন নেটওয়ার্ক তত বেশি ডিসেন্ট্রালাইজড থাকবে। তো, চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে একটি ফুল নোড চালু করা যায়।
কি কি লাগবে ফুল নোড শুরু করতে?১। একটি কম্পিউটার।
২। অবশ্যই র্যাম ২ জিবি বা তার বেশি হইতে হবে। বেশি হলেই ভালো।
৩। যে ড্রাইভে ইনস্টল করবেন সেখানে অবশ্যই ~৩৪০ জিবি খালি থাকতে হবে। এইটা পরিবর্তনশীল, সবসময় বাড়তে থাকবে।
৪। মোটামুটি ইন্টারনেট স্পিড।
প্রথমেই আপনাকে বিটকয়েন কোর ওয়ালেট ডাউনলোড করতে হবে।
https://bitcoin.org/en/bitcoin-core/ এইখানে গিয়ে আপনার অপেরেটিং সিস্টেম অনুযায়ী আপনি ওয়ালেটটি ডাউনলোড দিন। ডাউনলোড হওয়ার পর আপনি যেভাবে সাধারণ ওয়ালেট ইন্সটল দেন সেভাবেই ইন্সটল দিন, শুধু খেয়াল রাখবেন আপনি যে ড্রাইভে ইন্সটল দিচ্ছেন ওইটাতে ৩৪০ জিবি + স্পেস খালি থাকতে হবে।
ইন্সটল দিয়ে আপনি যখন বিটকয়েন ফাইলটি ওপেন করবেন তখন আপনার সামনে নিচের এইরকম একটা ইন্টারফেস আসবে।
এইখানে নিচে আপনি খেয়াল করলে দেখবেন যে আপনার ওয়ালেট বিটকয়েন এর সবগুলো ট্রাঞ্জেকশন ইতিহাস ডাউনলোড করছে। মানে শুরু থেকে এই পর্যন্ত যত ট্রাঞ্জেকশন হয়েছে সবগুলো ডাউনলোড করা হচ্ছে। তো এইটা ডাউনলোড হইতে মোটামুটি সময় নেবে। তবু আপনি যদি ভালো ইন্টারনেট স্পিড ব্যবহার করে থাকেন এবং ফাইলটি ইন্সটল করার জন্যে এস.এস.ডি ব্যবহার করেন তাহলে ডাউনলোড প্রসেসটা অনেক তাড়াতাড়ি হবে।
যখন দেখবেন আপনার বিটকয়েন কোর ওয়ালেট সম্পুর্নরুপে বিটকয়েন ব্লকচেইন ডাউনলোড করেছে, আপনি ফুল নোড সফলভাবে সক্রিয় করেছেন। এখন আপনি যখনই এই ওয়ালেট বা বিটকয়েন কোর সক্রিয় রাখবেন, তখনই আপনি ফুল নোড সক্রিয় রাখছেন যা বিটকয়েন নেটওয়ার্ক কে আরো শক্তিশালী করে পাশাপাশি আপনার নিজের জন্যও ভালো।